এশিয়ায় জমজমাট ধর্মব্যবসা

এশিয়ান দেশগুলোর ভিতর বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে জনসাধারণ অত্যন্ত আবেগপ্রবণ। তিন দেশের ভৌগোলিক দূরত্ব যাই থাকুক না কেন, কিছু সাধারণ কর্মকান্ডে এদের মধ্যে ব্যপক মিল আছে যেগুলো তিনটি দেশেই এক রকম। এর একটি হচ্ছে পান থেকে চূন খশলেই ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক গুরুদের শরনাপন্ন হওয়া। আর এই আবেগের ফায়দা তুলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই ভন্ড ধর্মব্যবসায়ীরা এমনকি মা-বোনদের সম্ভ্রম নিয়েও খেলছে এরা।
পাকিস্তানের বিশেষ কিছু জায়গায় আইন শৃঙ্খরার চরম অবনতি দেখা যায়। আইন শৃঙ্খলার অবনতির সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম ও অপরাধ গাণিতিক হারে বাড়ে। আর অপরাধ জগতের নতুন এক মাত্রা হচ্ছে ধর্ম ব্যবসা। সেখানে মসজিদের ইমামতির পাশাপাশি ঝারফুক, তাবিজ, কবজের বাণিজ্য করে থাকেন অনেকে। চিকিৎসার নামে বহু নারীর দুর্বলতার সুযোগ নেন তারা।
ভারতবর্ষেও তাই। ভারত সরকার যেহেতু কোন ধর্মে বিশ্বাস করেনা, সেহেতু এ ধরনের ভন্ড বাবাদের ব্যাপারে তার কোন ধরনের মাথা ব্যাথা নেই। বরং এ ধরনের ভন্ড বাবাদেরকে সরকার অনেকক্ষেত্রেই সাধুবাদ জানায়। দুনিয়ার আদিম জাতিগত সব ধরনের নোংরা প্রথাগুলো ভারতীয় ভন্ডপীর বাবাদের দেখা যায়। উদাহরনস্বরূপ বলা যেতে পারে – উলঙ্গ সম্মেলনের কথা। বর্তমান একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এ ধরনের বর্বর সম্মেলনকে ভারত বর্ষ কিভাবে সাধুবাদ জানায় তা আসলেই বোধগম্য নয়।
এবার আসা যাক, বাংলাদেশের ধর্মব্যবসায়ীদের কথায়। এমন কোন জঘন্য বর্বর ও পৈশাচিক নোংরা কাজ নেই যা তারা করেনা। বিভিন্ন ধরনের বিকৃত রুচির ভন্ড ধর্মব্যবসায়ীদের উপদ্রবে জনসাধারণ অতিষ্ট। কেউ কেউ বাড়ী বাড়ী যেয়ে পানি পড়ার ব্যবসা করে। সুযোগ বুঝে চুরি, ডাকাতিও করে।  বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায়, প্রায় প্রতিটি এলাকায় এ ধরনের ভন্ডদের দৌরত্মে আজ সরকারের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ। পুরাতন ঢাকা, নতুন ঢাকা ছাড়াও গোটা বাংলাদেশের আনাচে কানাচে এদের প্রকাশ্য আস্তানা সবারই জানা। এর মধ্যে পুরাতন ঢাকার ধুপখোলা, গেন্ডরিয়া, ওয়ারি, বাসাবো, লালবাগ, স্বামীবাগ, সুত্রাপুর, ফরাশগঞ্জ, মিল ব্যারাক, জুরাইন, যাত্রাবাড়ী, মিরপুর, মতিঝিল, পুরানা পল্টন অতি পুরাতন ও কুখ্যাত। কোন এক অজানা কারনে সব সরকারের আমলেই এরা পার পেয়ে যায়। এমনকি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এদের খবরও ছাপা হয় না।
এ ধরনের ভন্ডরা সবদিক ম্যানেজ করে চলে। স্থানীয় ও প্রশাসনের কর্ণধারদের সবার জন্য আলাদা আলাদা নজরানার ব্যবস্থার কথা সবারই জানা। বিশেষ করে, এলাকার উঠতি বখাটে মাস্তানদেরকে সর্বাবস্থায় খুশী রাখতে এরা সদা-সচেষ্ট। এমনকি অনেক ভিআইপিদেরও আনাগোনা র‍য়েছে এসব ভন্ডলোকদের আস্তানায়। এই ভন্ডদের বিশাল বাহিনী থাকে। তারা ২৪ ঘন্টা পালাক্রমে কাজ করে। হুজুগে মাতাল বাঙ্গালী সেখানে হুমড়ি খেয়ে পরে। অসহায় মানুষদের বিভ্রান্ত করে সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে এ ধরনের ভন্ডরা। এযেনো বিনা চালানে রমরমা ব্যবসা। অসহায় মানুষ বিপদে পড়ে তাদের সব দুর্বলতা খুলে বলে। ঐ দুর্বলতার সুযোগের সুযোগ নেয় তারা।
অনেক সময় দেখা যায়, পুলিশের কলঙ্কিত জেলখাটা, হাবিলদার, দীর্ঘদিন কারাভোগ করে শর্টকাট অর্থ উপার্জনের রাস্তা বের করে নিয়েছে ধর্ম ব্যবসার মাধ্যেমে। এই ভন্ডদের আবার দালাল থাকে যারা কিনা মাস শেষে লাখ টাকা উপার্জন করে। এ সমস্ত দালালেরা সমাজে ছদ্মবেশে মুখোশের অন্তরালে লুকিয়ে আছে। এলাকায় তাদের অবস্থানও ভালো। প্রতিটি মানুষেরই কম বেশী সমস্যা থাকে। সমস্যার সমাধান দ্রুত কে না চায়? সমস্যায় পড়া মাত্র দালালেরা সুকৌশলে ফাঁদ পাতে।
আমাদের এই তিন দেশের মানুষই আবেগপ্রবণ, ধর্ম সম্পর্কে উদাস, পারিপাশ্বিকতার শিকার, মূর্খ্য ও অল্পতে না জানা বিষয়েও রাজী হয়ে যায়। যার কারনে খুব দ্রুত এ ধরনের ভন্ডদের খোরাকের বস্তুতে পরিণত হয়। এ ধরনের ভন্ড ধর্মব্যবসায়ীরা ক্যন্সারের ভাইরাস। এরা দেশ ও জাতির এক বিরাট শত্রু।
সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের আওয়াজ তুলতে হবে ধর্মের নামে প্রতারণা করা এই ধরনের অসৎ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে। তাদের উপযুক্ত বিচারের আওতায় আনতে হবে। ওরা মানুষ নামে জানোয়ার! এদেরকে পাকড়াও করে প্রথমেই মিডিয়ার মাধ্যমে তার পরিচয় ও ঘটনা তুলে ধরে সমাজের সাধারণ জনগণকে সজাগ করে তারপর পুলিশে দিয়ে বিচার নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সংগঠনগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। নিকটস্থ থানায় নয়, প্রথমেই পুলিশের সবোর্চ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বর্ণনা করে অনুমতি পাশ করে নেয়া জরুরী।  এদের জামীন যাতে না হয়, এদিকে কঠিন ভাবে নজর রাখতে হবে। উপযুক্ত স্বাক্ষী প্রমানের মাধ্যমে ঐ ধরনের ভন্ডদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জঘন্য অপরাধী এইসব ভন্ডদের কুকর্ম সম্পর্কিত সংবাদ ও ভিডিও ক্লিপ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। লাখো-কোটি মানুষের সরল ধর্ম বিশ্বাসকে পুঁজি করে এসব ভন্ডদের ব্যাপারে আমাদের দেশীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেন, “চোখ থাকিতেও অন্ধ!”
Share the Post:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *