মাদ্রাসার হুজুর বা আলেমগণ কি আইনের আওতার বাইরে?

এই লেখার শিরোনামটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয় আর এটি দেখে মানুষের ভালো লাগবে না। কেননা এদেশের কোটি কোটি মানুষ তাদের ধর্মীয় বিষয়গুলোকে কলংকমুক্ত দেখতে চায়। তারা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত মেনে নেয়না। এদেশের শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ নিজের ধর্ম পালন করতে পারুক বা না পারুক নিজেদের ধর্মীয় দায়িত্বশীলদের পূর্ণাঙ্গ ও নিখুঁত আদর্শবান হিসেবে দেখতে চায়। একজন ব্যক্তি নিজে ধূমপান করলেও মসজিদের ইমাম সাহেব সিগারেট খাবেন তা এ দেশের মানুষ আশা করে না। অনেকে দাড়ি শেভ করে। কিন্তু কোনো আলেম দাড়ি কাটুক তা পছন্দ করে না। নিজেরা পর্দা মানুক বা না মানুক আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের পর্দা লঙ্ঘন মেনে নিতে পারে না। যেসব মানুষ নির্দ্বিধায় সুদ-ঘুষ খেয়ে বেড়ায় তারাও তাদের হুজুরকে অবশ্যই হালাল খাওয়ার বা কোন ধরনের সন্দেহজনক খাবার থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে ভালোবেসে পাহারা দিয়ে থাকে। এসবই তাদের ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ও আলেমদের প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন। দেশের গড়পড়তা নীতি-নৈতিকতা ও গণচরিত্রের তুলনায় ধর্মীয় সমাজের নীতি ও চরিত্রের মান হতে হবে স্বচ্ছ, পবিত্র ও অপরাধমুক্ত।
মানুষ গর্ব করে বলে থাকে, দ্বীনি মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষকরা কিংবা এদের সাথে জড়িত মানুষেরা অপেক্ষাকৃত সব ধরনের অপরাধের বাইরে কিন্ত দিন শেষে তারাও মানুষ। আর মানুষ হিসেবে দুর্বলতার কারণে তারাও যেকোনো অপরাধ করতে পারে। তারা তাদের এই দাড়ি বা টুপির আড়ালে মানুষের কাছে তাদের যে ভাবমূর্তি তার অন্তরালে যে খারাপ কিছু করবে না তার তো কোন গ্যারান্টি নেই। হতে পারে যাকে আলেম বা ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব বলা হচ্ছে তিনি হয়ত এমন কেউ নন বা হয়তো তার বাহ্যিক রূপ আলেমের। আসলে তিনি ইসলামের আদর্শ ধারণ করেননি। অনেক সময় চেহারা-সুরত পোশাক-আসাক দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়। মানুষের আস্থা নিয়ে নোংরা খেলা করা হয়। তারা ভুলেই যায় তারা আইনের বিচার ও শাস্তির উর্ধে নয়।
একটি মাদরাসা শিক্ষক বা সাধারণ আলেম দেওয়ানী বা ফৌজদারি অপরাধ করলে এবং তা প্রমাণিত হলে তার বিচারে আলেম সমাজ বাধা হয়ে দাড়ায় সংগে সাধারণ মানুষও। সমাজ ও দায়িত্বশীল লোকজন নিজেদের মধ্যে সঙ্ঘটিত অপরাধ ঢেকে রাখেন। যেকোন অপরাধ ঘটলে ন্যায্য ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। তবে একটা কথা স্পষ্ট যে কোনো ধর্মীয় ব্যক্তির পদস্খলন হলে তার বিচারও রাষ্ট্রের আইনেই হওয়ার নিয়ম। দীর্ঘদিন মাদরাসাগুলোকে জঙ্গিবাদের আস্তানা ও জঙ্গি প্রজনন কেন্দ্র বলে প্রচার করেও মানুষের মনে এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। অথচ ধর্ষণের সেঞ্চুরি, শত শত এবিউজিং এগুলো চিরতরে বন্ধ ও নির্মূল করা প্রয়োজন। কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে আদর্শের দাবিতেই তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। মনের কুপ্রবৃত্তিকে প্রশ্রয় দেওয়া কোন ব্যক্তিকে ধর্মের দোহাই দেয়ে বাচানোর চেষ্টা করা যাবেনা। চার দিকে এখন যে অবস্থা শুরু হয়েছে তা নিয়ে আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদদের ভাবতে হবে এবং মানুষকে বোঝাতে হবে। দায় এড়িয়ে না গিয়ে সমাজকে সংশোধন করতে হবে। দেশে চার-সাড়ে চার লাখ মসজিদ, লাখো মাদরাসা এখানে লাখ লাখ মানুষ কর্মরত আছেন। কারো বিরুদ্ধে যদি কোন অভিযোগ থাকে বা কেউ যদি অপরাধী বলে প্রমাণিত হয় তার পক্ষে কোনভাবেই দাড়ানো যাবে না। যেকোন যৌন অপরাধীকে তাদের পরিচয় খুঁজে বের করে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে।
আজকাল যেকেউ চাইলেই একটি ঘর ভাড়া নিয়ে ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় কিংবা অজপাড়াগাঁয়ে প্রাইভেট ঠিকানা বানিয়ে ফেলে বলে এবং প্রচার করে এটি একটি মাদ্রাসা বা বালক মাদ্রাসা অথবা মহিলা মাদ্রাসা। সম্প্রতি কয়েক বছরে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারতে অমুসলিম তালিবান, মুজাহিদ ইত্যাদি নানান ইস্যু দেখা দিয়েছে। আমাদের দেশেও মসজিদ-মাদরাসায় সমাজের অন্যান্য অঙ্গনের সাথে পাল্লা দিয়ে শিশু নির্যাতন, ধর্ষণ ও যৌনাচার দেখা গেছে। যুগ যুগ ধরে খোদাভীতি, নৈতিকতা, উন্নত চরিত্র, উত্তম আচরণ, নির্লোভ জ্ঞান সাধনা, সৎ ও সাত্তিক জীবন যাপন হঠাৎই যেন লোপ পেয়েছে।
মাদরাসা সংশ্লিষ্টদের খুব সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কিছু বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে যেমন-শিক্ষক ও ছাত্রের পরিচয়পত্র আছে কিনা, তাদের চারিত্রিক সনদ, নাগরিক সনদ, আগের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাগত ও নৈতিক চরিত্রগত সার্টিফিকেট ছাড়া কেউ যাতে  মাদরাসায় থাকতে না পারে।
Share the Post:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *