নারীর ক্ষমতায়নে দেশ সবক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই তবে এখনো রাজনীতিতে বহুদূর যেতে হবে জেন্ডার সমতা অর্জনের লক্ষ্য পূরণে। কিন্তু এ অগ্রগতি এখনো অনেকটা আলোর নিচে অন্ধকারের মতো। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ২০১৮-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ ১৪৯টি দেশের মধ্যে ৪৮তম স্থানে। বেশকিছু বিষয়কে বিবেচনায় রেখে এই ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে এর মধ্যে একটি হলো, নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন।
রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে দেশ কতটুকু এগিয়েছে, তা দেখার জন্য তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- সংসদে কতজন নারী সদস্য আছেন, মন্ত্রিপরিষদে কতজন নারী আছেন এবং গত ৫০ বছরের মধ্যে কত বছর রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে নারী দায়িত্ব পালন করেছেন। আর এই তিন ক্ষেত্রের অগ্রগতি বিবেচনায় নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। এই সাফল্যের পেছনে বিশেষভাবে ভূমিকা পালন করেছে গত ৫০ বছরের মধ্যে প্রায় ২৮ বছরই নারী রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, যেটি বিশ্বে বিরল ঘটনা। কিন্তু দুটি ক্যাটিগরিতে কতজন নারী মন্ত্রিপরিষদে আছেন, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো নয়। এখানে ১৪৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৬তম। সংসদে কতজন নারী আছেন এই ক্যাটিগরিতে এ দেশ ৮০তম। তবে গড়ে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। বাংলাদেশের প্রধান দলগুলোর দলপ্রধান নারী।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, উপদেষ্টা, নির্বাহী সদস্য মিলিয়ে ১২৩ জনের মধ্যে ১৭ জন নারী আর বিএনপিতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে জাতীয় স্থায়ী কমিটি এবং নির্বাহী কমিটি মিলিয়ে ৫২১ জনের মধ্যে ৬৯ জন নারী। দুই দলেরই কেন্দ্রীয় কমিটিতে ১৩ শতাংশ নারী রয়েছেন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ২৯৩ জনের মধ্যে ২১ জন নারী। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নারীর সংখ্যা একটু বেশি হলেও জেলা পর্যায়ে গড়ে ৩ থেকে ৪ শতাংশের বেশি হবে না। আবার উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে এর চেয়ে আরও কম। সংসদে নারীর সংখ্যা ৩৫০ জনের মধ্যে ৭৩ জন অর্থাৎ ২০.৮৫ শতাংশ।
দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে রেখে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সব শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। সুতরাং সিদ্ধান্ত গ্রহণে জেন্ডার অসমতা রেখে গণতন্ত্র নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। অন্যদিকে স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার একটি অন্যতম লক্ষ্য হলো, জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করা অর্থাৎ নারী-পুরুষের সমানাধিকার নিশ্চিত করা। সেখানে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সব পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমান অংশগ্রহণ এবং সুযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এই রকম কয়েকটি মানদণ্ড ঠিক করা হয়েছে, যেমন- সংসদে ও স্থানীয় সরকারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো, সব নেতৃত্ব স্থানীয় পদে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি পূরণের সময়সীমা ধরা হয়েছে। সরকার এই লক্ষ্য পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। ফলে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে দলগুলোকে কাজ করতে হবে; অন্যথায় এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না।
এ ছাড়া গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে একটি ধারা যুক্ত করা হয় ২০০৯-এর সংশোধনীতে। এই ধারায় বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মধ্যে রাজনৈতিক দলের সব পর্যায়ের মূল কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। সুতরাং আরপিও বাস্তবায়নের জন্যও দলগুলোর একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বাস্তবতা এমন দাড়িয়েছে যে নারীদের জন্য নারী সংগঠন আর মূল দলের সব পদ পুরুষের দখলে শুধু নারীবিষয়ক সম্পাদক পদটি বাদে। রাজনৈতিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বাস্তবে নারীদের শুধু রাজনৈতিক সমাবেশে, ভোটের সময় নারী ভোটারের জন্য ক্যাম্পেইনে ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। নারী সহযোগী সংগঠন এই কাজের নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। কার্যত দলের সিদ্ধান্ত গ্রহণে তৃণমূলে নারীর কোনো অংশগ্রহণ নেই। দলের মধ্যকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াও গণতান্ত্রিক নয়। মিটিং-মিছিলে ঠেলাঠেলি করে বসার, দাড়ানোর জায়গা দখল করতে হয়, মিটিং অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়ও নারীবান্ধব নয়। দলে জেলা পর্যায়ে যেহেতু নারীবিষয়ক একটি সহযোগী সংগঠন রয়েছে; সুতরাং নারীদের দলের কার্যক্রমে নিয়ে আসা, স্থানীয় পর্যায়ে নমিনেশন, অর্থ বরাদ্দ- সবগুলো হয়ে থাকে নারী সহযোগী সংগঠনের মাধ্যমে। সুতরাং যেসব নারী মূল দলের সদস্য পদে থাকেন, তাদের সুযোগ সীমিত দলে ভূমিকা পালনের। আবার নারীবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব কী, সেটিও পরিস্কার নয়। এভাবে চলতে থাকলে যে উদ্দেশ্যে এই আইন করা হয়েছে, তা কখনোই সম্ভব নয়। নারীরা টপ ফাইভে না আসতে পারলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ সম্ভব নয় কোনো উদ্দেশ্যই সফলতার মুখ দেখবে না।
নারীদের একে অপরকে সাপোর্ট করতে হবে, একত্র হতে হবে, একসঙ্গে নিজেদের জন্য, ভালো পরিবেশ তৈরির জন্য কাজ করতে হবে, নেতৃত্ব-দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে যেতে হবে। মনে রাখা দরকার, সবকিছু বিনা বাধায়, বিনা যোগ্যতায় হাতের কাছে চলে আসবে না; বরং নিজেকে যোগ্য করতে হবে। একসঙ্গে কাজ করে গেলে একসময় সফল হওয়া যাবে।
5 Responses
আপনার অন্য লেখা পছন্দ না হোলেও এই লেখাটা দারুণ লেগেছে।
নারীদের আরও এগিয়ে যাওয়া দরকার
কুত্তী মাগি, রাজনীতি চোদাস?
তুই লেখালেখি বন্ধ কর। তোর কপালে খারাপি আছে
ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী নারীদের রাজনীতি করার কোন বিধান নাই