নারী অধিকারের বাস্তবচিত্র

নারী অধিকার শিরোনাম এর মূল ব্যর্থতাই হলো নারী অধিকার নিয়ে আলাদা করে বলতে হয়। পুরুষ অধিকার নিয়ে তেমন কোন মাথাব্যথার অবকাশ নেই। কেননা যে অধিকার সমাজে প্রতিষ্ঠিত তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার থাকে না। যত ব্যর্থতার ঘানি তা ঘুরেফিরে একজন  নারীকেই বয়ে বেড়াতে হয়। দিন শেষে আমার অধিকার কই, আমার অধিকার আমাকে বুঝিয়ে দাও বলে চিতকার করতে হয়। একজন নারীর পরিচয় তো সর্বপ্রথম একজন মানুষ হিসেবে অথচ এই সত্য প্রতিষ্ঠা করতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে যুগের পর যুগ ধরে।
নারীর অধিকার তা সামাজিক,অর্থনৈতিক,বা আইনত যেটাই হোক প্রতিষ্ঠা করা এখনও বেশ কষ্টসাধ্যই রয়ে গেছে আমাদের দেশীয় প্রেক্ষাপটে। নারীর অধিকার এবং ক্ষমতায়নে ছোট থেকে ছোট যেকোন কাজেই আসবে সীমাহীন বাধা এযেনো অলিখিত এক সংবিধান। পুরুষতান্ত্রিক কিংবা পিতৃতান্ত্রিক মনোভাবের পরিবর্তন আজও সেই অর্থে হয়ে ওঠে নি। এজন্য ব্যর্থতার ভার বহন করতে হবে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রকে। আজকের দিনেও একজন মেয়ের যোগ্যতার মাপকাঠি যেখানে শারীরিক সৌন্দর্যের মুখাপেক্ষী সেখানে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব, কর্মদক্ষতা ইত্যাদি বিচার করা হবে এমনটা ভাবাই যায় না।কাজের ক্ষেত্রে দেখা যায় নারীদের সব সময় বেশি কিছু করে দেখাতে হয়। পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে নেই প্রতিটি পদক্ষেপে এটা প্রমাণ করতে হয়। নিজের শক্তি ও সামর্থ্য প্রমাণ দিতে হয়। নারীদের এমনিতেই কর্মক্ষেত্রে সুযোগ আসে কম। ফলে যে সুযোগই আসুক তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারতে হয়। নইলে এগিয়ে যাওয়াটা কঠিন হয়ে দাড়ায়।
নারী অধিকার কখনই আলাদা কোন বিষয় নয়। বরং তা মানবাধিকারেরই অংশ। মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলে নারী অধিকার নিয়ে আর আলাদাভাবে ভাবার প্র‍য়োজন পরে না। অথচ এরপরও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রতিটি নারীকে প্রতিনিয়ত নিজের মতো করে লড়াই করে যেতে হয়। কেননা সমাজের সকলক্ষেত্রেই আজ নারীরা বৈষম্যের শিকার। বিশ্বের অনেক দেশেই আইনের মাধ্যমে নারীর অধিকার সুনিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রনয়ণ করা হয়েছে। কিন্ত এরপরও বাস্তবচিেত্র ভিন্নতা দেখা যায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নারীর অধিকারহীণতাই পরিলক্ষিত হচ্ছে।
একজন নারীর নিরাপত্তা দেওয়া তথা অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত না করা গেলে সেই দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কোনভাবেই সম্ভবপর নয়। আর এই অধিকার বাস্তবায়ন করতে হলে প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে পরিবার থেকে। পরিবার থেকেই যদি একজন মানুষের অধিকার খর্ব করা হয় তখনই কিন্তু সে মানুষটা এটাকেই নিয়তি বলে ধরে নেয় এবং এখান থেকেই শুরু হয় বঞ্চিত হওয়া। পারিবারিক অধিকার বঞ্চিত একজন মানুষ আর সেইভাবে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকেনা আর এভাবেই সে ক্রমশ পিছিয়ে পড়তে থাকে এবং যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তিতে সামাজিক ও  ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেনা। তবে যে কারনেই হোক সামাজিক বা অর্থনৈতিক অবকাঠামোগত দিক অথবা শিক্ষিত লোকের অভাবে এধরণের অধিকার বঞ্চিত কিন্ত গ্রামাঞ্চলের নারীরা বেশি হয় শহরাঞ্চলের চাইতে। গ্রামাঞ্চলে এখনো নানাবিধ কুসংস্কার কিংবা বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান অনুযায়ী একজন নারীকে খুব ছোট করে দেখা হয় যার কারণে নারীরা প্রচন্ডরকম হীণমন্যতায় ভেগে। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে নারী সমাজ অবহেলিত,নিগৃহীত, নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে।
এই অবস্থার পরিবর্তন চাইলে প্রথমে অবশ্যই একজন নারীকে নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি যারা এখনো সচেতন নয় তাদের সচেতন করতে হবে। এভাবেই ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসবে এবং সমাজ থেকে নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর হবে। যা কোন ভাবেই কারো একক প্রচেষ্টায় সম্ভব নয়। সরকারের পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষকে এব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই কেবলমাত্র পুরোপুরিভাবে সমাজের সকল ক্ষেত্রে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব অন্যথায় নয়। সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন,যৌতুকের মত নিকৃষ্ট দাবি অনেকাংশেই কমে গেছে। তবে পুরোপুরি নির্মূল এখনো হয়নি। আর এজন্যই প্র‍য়োজন সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার।
Share the Post:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *