হিন্দুত্ববাদি বলেন আর ইসলামিস্টই বলেন, ধর্মানুভূতি আসলে যৌন সুড়সুড়ির মতো কাজ করে! ধর্ম নিয়ে সমালোচনা শুনলেই যাদের মধ্যে এ ধরনের সুড়সুড়ির মত অনুভূতি হয়, সে হোক ইসলাম ধর্ম কিংবা হিন্দু ধর্মাবলম্বী কারো মধ্যে, তারাই হচ্ছে মূলত হিন্দুত্তবাদি কিংবা ইস্লামিস্ট।
আমি এক অন্য জগতে বসবাস করি। যখন এসব ইউরোপিয়ান দেশের বিভিন্ন মানুষের সাথে চলাফেরা করি কিংবা দেখা-সাক্ষাত করি তখন এক অন্য দুনিয়ায় থাকি আমি। এখানে নেই কোন সাম্প্রদায়িকতা, নেই কোন ধর্মানুভুতির কোন অস্তিত্ব। নিয়মিত উন্নতির পথে যাত্রা করে এই জগতের মানুষরা।
আর আরেকটা জগত আমি দেখতে পাই আমাদের সোশাল মিডিয়া ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকার খবরে। এখানে দেখা যায় জঙ্গিদের নিষ্ঠুরতা, জিহাদের বর্বরতা, মন্দিরে হামলা ইত্যাদি। মনে হয় যেন আমরা দিন দিন মধ্যযুগে ফিরে চলে যাচ্ছি। এ জগতে প্রতিনিয়ত চলে নৃশংসতার মাধ্যমে নিজ নিজ ধর্ম প্রতিষ্ঠার রেস।
খুব কঠিন সময় মানুষের সামনে। সভ্যতার সামনে। দ্রুত বদলে যাচ্ছে জীবিকা। আজকের স্কিল, কাল আসবে না কোন কাজে। অটোমেশনের ফলে কাজ হারাবে আরো অসংখ্য মানুষ। কেও ইম্যুইন নয়। এই আগের মাসেই গণহারে লে অফ হয়েছে আই বি এম, গুগল, মাইক্রোসফটে। ইনফি ব উইপ্রো এরা গোপনে তাড়িয়েছে অসংখ্য প্রগ্রামার। নতুন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রাজুয়েটদের চাকরি নেই-যাদের আছে তাদের কবে যাবে কেও জানে না। অবশ্য এর মানে এই নয়, অর্থনীতি রসাতলে যাচ্ছে। বরং উলটো। অটোমেশনের দৌলতে খুব কম কর্মী দিয়েই মুনাফা আসছে দ্রুত, অনেক বেশী। পৃথিবীর টপ ২% , যারা প্রযুক্তির, উৎপাদনের মালিক, তাদের ধন দৌলত সম্পদ বাড়ছে গুনিতক হারে। না চুরি ডাকাতি বা কোন রাজনীতি নেই এর মধ্যে। প্রযুক্তির উন্নতি এবং অটোমেশনের জন্য আজ যে ফাক্টরীর মালিক সে আরো ধনী-যে আগে কর্মী ছিল সে বেকার। আর হ্যা, ফাক্টরীর নাম মাইক্রোসফট, গুগল, আই বি এম সব হতে পারে। কর্মীদের হাল সেই এক বা আরো খারাপের দিকে।
৯৮% এর সামনে এক অনিশ্চিত অন্ধকার। এর থেকে পরিত্রানের রাস্তা একটাই। শিক্ষা। শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরবর্তন। চাই সেই শিক্ষা, যে শিক্ষার ফলে ছেলে মেয়েরা হবে সৃজনশীল। নতুন ব্যবসা, নতুন প্রযুক্তি-নতুন ভাবনার জন্ম দেবে। দিতেই হবে। আগে এগুলো ছিল অপশনাল। ভাল , মেধাবীদের জন্য। এখন সবার জন্য। কারন গয়ংগচ্ছ চাকরির ক্ষেত্রটাই হবে সংকুচিত। আমেরিকার স্কুলগুলিতে এই নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে-পাইলট প্রোগ্রাম ও চালু হয়েছে।
পৃথিবীর অনেক দেশই এই পরিবর্তিত যুগের যাথে পা মেলাতে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে। এরা চীন, দক্ষিন কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান।
এধরনের কিছু দেশ বাদ দিয়ে যদি আমরা আমাদের বাংলাদেশের দিকে তাকাই তাহলেই বুঝতে পারবো, আমাদের সবুজ দেশটি ধীরে ধীরে মধ্যযুগের পথে যাত্রা করছে। সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করা হয়েছে ৯০ ভাগ মানুষের মাথায়! আমরা যদি এখনই এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এর থেকে বের হতে না পারি তাহলে আমরা সত্যি সত্যিই চলে যাবো অন্ধকার যুগে।